কিস্তি নিতে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি থেকে ঢাকায় গেলো ১২ বাস

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই মিলবে সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ এমন প্রলোভনে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এলাকার শত শত নিরীহ নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীকে। রোববার রাতে কথিত সেই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাত্রা হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির শত শত নারী-পুরুষ।

স্থানীয়রা বলেন, কিছু চক্র রাতে লুকিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। যাদের ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে এদের নেওয়া হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই বয়স্ক, বৃদ্ধ, খেটে-খাওয়া সাধারণ শ্রমিক-কৃষক-দিনমজুর মানুষ রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আরও বিপুল গ্রামের নারী-পুরুষ ঢাকার দিকে ছুটে গেছে। সবাই ঢাকার সমাবেশে যেতে বাড়ি থেকে বের হন। সভা সফল হলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে গাড়িতে জন প্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
দেশের পাচার হওয়া লক্ষ কোটি টাকা ফিরে এনে বেকার ও সাধারন মানুষের মাঝে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার নাম করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন হাজীগঞ্জ থেকে ৯টি বাস ও শাহরাস্তি থেকে ৩টি বাস ভাড়া করে গ্রামের সহজ সরল নারীদের লোভনীয় অফার করে ঢাকায় প্রেরণ করেন হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড় এলাকার আলমগীর হোসেন সুমনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম, তার ছেলে মাহমুদ খাঁন দিপু(২৫) ও নারগিস বেগম (৩০) নামের জনৈক নারী।
এদিকে সুরমা বাস পরিবহনের ৫টি বাস ভাড়া নেন জনৈক সুমনের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা। এমন তথ্য এসেছে প্রিয় চাঁদপুরের কাছে। তাদের তথ্য যাচাই করছে টিম প্রিয় চাঁদপুর।

(সুরমা বাসের নাম্বারগুলো হচ্ছে-২৯৫২/৩১০০/৮৮৪৩/০২৭৫/৯০৪৩) ফিরোজপুর থেকে (আল আরাফাহ বাস ১টি) জনৈক মানিক (পরিচয় পাওয়া যায়নি) সুবিদপুর থেকে (আল আরাফাহ বাস ১টি) প্রধানীয়া বাড়ির ফারুক।(বাস নাম্বার পাওয়া যায়নি)
আলীগঞ্জ থেকে ৩টি পদ্মা বাস (চাঁদপুর থেকে ভাড়া করা হয়েছে বলে জানা যায়। (একটি বাস ভাড়া করে পারুল, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলো বলে জানা যায়। একটি বাস ভাড়া করে দেলোয়ারের নাতিন ও নাতনি জামাই। (পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। আরেকটি বাস ভাড়া করে জনৈক মোস্তফা। (পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি) (বাস নাম্বার পাওয়া যায়নি)।

এদিকে শাহরাস্তির ইছাপুরা গ্রামের কতিপয় ব্যক্তির উদ্যোগে ৩টি বাসে করে ভোর সাড়ে ৫টায় সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় এবং বিকাল ৫টায় এলাকায় ফিরে আসে। সমাবেশে আসা মহিলাদের থেকে প্রতারণা করে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা বাস ভাড়া আদায় করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিতের জন্য কাজ করছে টিম প্রিয় চাঁদপুর।

চলতি মাসের ৯ নভেম্বর শনিবার চাঁদপুরের ফরিদঞ্জের পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রাম থেকে এমন একটি চক্রকে আটক করে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকমাস ধরে হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে নারগিস আক্তার নামে একজন মহিলা ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নাম করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর, কড়ৈতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় সদস্য সংগ্রহ ও জনপ্রতি ৩০ টাকা সংগ্রহ করে। শনিবার (৯ নভেম্বর) নারগিস আক্তার ছাড়া মাহমুদ খাঁন দিপু নামে আরেকজন যুবক মিটিং করার জন্য সাহাপুর গ্রামে আসে। কথিত সংগঠন ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহাবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সদস্যদের জনপ্রতি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা আদায় করার চেষ্টা করে তারা। এসময় স্থানীয় কিছু লোকের বিষয়টি সন্দেহ হলে তারা তাদের চ্যালেঞ্জ করে এবং সংগঠনের কাগজপত্র দেখাতে বলে। এই সময়ে তাদেরকে সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে একটি দোকানে আটকে রাখে স্থানীয় জনতা। পরে জনতার কাছে তারা জানায়, তাদের সংগঠনের উদ্যোগে ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগে জাতীয় সংস্থা’ শিরোনামে দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবিতে ২৫ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করবে। তাদের সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাথে যোগাযোগ রয়েছে তারা জানায়। লুণ্ঠিত ও পাচারকৃত অর্থ সরকার ফিরিয়ে এনে তাদের সংগঠেনর মাধ্যমে ভর্তিকৃত সদস্যদের ১ লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিবে। এসময় তাদের কাছে কিছু সদস্য সংগ্রহ ফরম ও লিফলেট পাওয়া যায়।

স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুছ, অপু শেখ, ফরিদা বেগম, মারজান বেগম, খুরশিদা বেগমকে ঋণ দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে সদস্য ফরম বাবদ ৩০টাকা এবং ঢাকা যাওয়ার জন্য ৮শত টাকা করে নিতে এসেছে। আজ আবার খাওয়া দাওয়ার জন্য প্রতি সদস্য থেকে ২০ টাকা করে নিয়েছে। আমরা এর আগেও এরকম প্রতারণার স্বীকার হয়েছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য এমরান হোসেন জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে এনজিও বা সমাজ সেবা কর্তৃক সমিতির কোনো নিবন্ধনি নেই। তারা একটি ভুঁইপোড় সংগঠনের নাম দিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি ঘটনাটি যেনে থানা পুলিশকে খবর দেই। থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মুচলেকা আদায় এবং সদস্য বাবদ নেয়া তিন হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বক্তব্য নিতে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, গোয়েন্দা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

Loading

শেয়ার করুন: