
কেএম নজরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ:
মাঘের শীত বাঘের গায়ে লাগলেও লাগেনি দুই মাসের শিশু কাসপিয়া নূরের গায়। কারণ তার লম্পট পিতা আরিফ হোসেন এই শিশুটিসহ তার মাকে ফেলে রেখে অন্যজনকে বিয়ে করে আমোদ-পূর্তিতে সময় কাটাচ্ছে। তাই তো মাঘ মাসের এই শীতকে শরীরে সয়ে মা তাসলিমা আক্তার তার স্বামীর বাড়িতে অনশন করেছেন। স্বামী আরিফ হোসেনের বোন আমেনা বেগম ও আত্মীয়স্বজনরা তাকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী এই নারী। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ডাওরি খান বাড়িতে। আরিফ হোসেন ওই বাড়ির মৃত সিরাজ খানের ছেলে। অনশন ছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে ওই নারী ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী তাসলিমা আক্তার ও প্রতিবেশীদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, দীর্ঘ ৯ বছর প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ৩ বছর পূর্বে ইসলামী শরীয়াহ মতে আরিফ হোসেনের সাথে ৩ লাখ টাকা কাবিনের বিনিময়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তাসলিমা আক্তার। বিয়ের পর থেকেই তারা চাঁদপুরের একটি ভাড়া বাসায় জীপনযাপন করতেন। ইতোমধ্যে তাদের দাম্পত্যজীবনে কাসপিয়া নূর নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। প্রবাস ফেরত (সৌদি প্রবাসী) আরিফ হোসেন বেকার থাকায় তাসলিমা আক্তার তাকে ধারদেনা করে খাওয়াতেন। গত কয়েকদিন পূর্বে আরিফ হোসেন তার স্ত্রীকে না জানিয়ে এনজিও থেকে গৃহীত লোনের টাকাসহ বাড়িতে চলে এসে পরিবারের সহায়তায় অন্যস্থলে বিয়ে করেন। খবর পেয়ে তিনি প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং পরে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কোলের শিশুকে নিয়ে স্বামীর অধিকারের দাবিতে তার বাড়িতে অনশন করেন।
এসময় অভিযুক্ত আরিফ বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে আরিফ হোসেনের বোন আমেনা বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, তাসলিমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, একটি শিশুকে নিয়ে তার মায়ের অনশনের খবর জেনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। শীতে শিশুটি রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। শিশুটিকে উষ্ণতা দিয়ে নিরাপদে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফ হোসেনের বড়ভাই মো. শরীফ খানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে ওই গৃহবধূর অনশন ভাঙ্গিয়ে ভুক্তভোগীর স্বজন হালিমা বেগমের সাথে তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।