নিজের ভাইয়ের সাথে সম্পত্তিগত সমস্যা। কিন্তু অচেনা ছাত্রলীগ নেতাসহ একদল যুবক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাড়িতে এসে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে করেছেন হামলা, পিটিয়ে জখম করেছেন পরিবারের সদস্যদের। আবার কখনো বাড়ির সামনে থাকা দোকানে করেছেন ভাংচুর, নিয়ে গেছেন দোকানের মালামালও ৷ অসহায় চিত্তে এমনি ঘটনার বর্ণনা করেছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গাব্দেরগাঁও এলাকার বরকন্দাজ বাড়ির বৃদ্ধ বয়সী মোঃ আবু তাহের।
আবু তাহের জানান, আমার এক ভাইয়ের সাথে সম্পত্তিগত জটিলতার কারণে তিনটি মামলা চলমান আছে। এর জের ধরে গত ১০ জুলাই একদল বহিরাগত কিশোর আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার স্ত্রী কুলসুমা বেগমকে রক্তাক্ত করে এবং আমার ছোট ছেলে দিদার হোসেনকে বেদম মারধর করে। বাড়ি-ঘর চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ভাংচুর করে। বাড়ির সামনে আমার একটি দোকান ভাড়া দিয়েছি, সে দোকানদারকে মারধর করে দোকানের মালামাল লুট করে এবং দোকানটি ছেড়ে দেয়ার আল্টিমেটাম দেয়। পরে দোকানদার দোকানটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। চলতি মাসের ১১ তারিখ রাত আনুমানিক ১১টায় ৫-৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে কয়েকজন। আমি, আমার স্ত্রী ও মেজো ছেলে বাড়িতে ছিলাম। আমার মেজো ছেলেকে বেদম মারধর করে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তারা। আমরা আত্মরক্ষার্থে চিৎকার করলে চারদিক থেকে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসে এবং গভীর রাতে সাধারণ মানুষের হাতে ডাকাত সন্দেহে তাদের কয়েকজন মার খায়। এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে তারা একটি মোটরসাইকেল ও ছুরি (দেশীয় অস্ত্র) ফেলে রেখে যায়। পরে আমার বড়ো ছেলে বিষয়টি থানায় জানালে থানা পুলিশের একজন ছুরি ও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। এরপর থেকে আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা পুরো পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মামলা না তুললে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জিসান, বিল্লাল, কাজল ও রেহানরা। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) গভীর রাতে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী মোঃ আবু তাহেরের বড় ছেলে মোঃ আবুল হোসেন বাদী হয়ে মোঃ জিসান, মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ রায়হান খান ও অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০জনকে বিবাদী করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানায় অভিযোগ দায়ের করা মোঃ আবুল হোসেন জানান, আমার দাদির সম্পত্তি নিয়ে বাপ-চাচাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা চলে আসছে এবং এটি নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান আছে। এর আগে গত ১০ জুলাই একদল যুবক আমার ছোট ভাইয়ের হাতে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। জখমকৃত স্থানে চারটি সেলাই করতে হয়েছে এবং সেদিন আমার মাকেও মারধর করে। এ ঘটনার পর আমি থানায় মামলা দিতে গেলে তখনকার সময়ে দলীয় ক্ষমতার প্রভাবে থানায় মামলা দিতে পারিনি৷ পরে বাধ্য হয়ে চাঁদপুর কোর্টে মামলা দায়ের করি। সরকার পরিবর্তনের পর মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। পরে সম্প্রতি মামলা তদন্ত শুরু হলে আমাদের দেয়া মামলার আসামী জিসান, বিল্লাল ও কাজলসহ ৮/১০জন মিলে গত ১১ অক্টোবর রাতে আবার আমাদের ওপর হামলা চালায়। সেদিন আত্মরক্ষার্থে আমরা চিৎকার চেঁচামেচি করলে স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতিহত করে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবু তাহেরের ঘরের দরজা এবং জানালায় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তার ভাড়া দেয়া দোকানটির দোকানদার দোকানটি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র দোকান দিয়েছেন।
হামলার শিকার হওয়া দোকানদার সোহেল জানান, আমি দোকান ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছিলাম। একদিন এক গ্রুপ ছেলে আসে, হোসেনদের বাড়িঘর এবং আমার দোকান কোপায় ও দোকান থেকে আমার মালামাল নিয়ে যায়৷ কয়েকদিন আগে গভীর রাতে জিসানসহ কয়েকজন মিলে পাঁচটা মোটরসাইকেলে প্রায় ১৫জন এসে ওই বাড়িতে ঢুকে। আমরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুনে এলাকাবাসী মিলে এগিয়ে গেলে তারা একটি মোটরসাইকেল, ছুরি ও কয়েক জোড়া জুতা রেখে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, সেদিন রাতে অন্য এলাকা থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে হোসেনদের বাড়িতে হামলা করে। আমরা চিৎকার শুনে এলাকাবাসীসহ এগিয়ে যাই। পরে আমরা সবাই এগিয়ে গেলে তারা একটি মোটরসাইকেল ও একটি ছুরি রেখে পালিয়ে গেলে থানা পুলিশের হাতে আমরা সেগুলো তুলে দেই৷
ঘটনার অভিযুক্ত ও গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা জিসান বলেন, এ বিষয়ে নিউজ কইরেন না। তারা আমাকে মেরে কী অবস্থা করছে। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
১১ অক্টোবর রাতে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল ও ছুরি উদ্ধার করা ফরিদগঞ্জ থানার এস. আই. মাহবুবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।