ফরিদগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়ে মৃতদেহ দাফনে বাধা

 

কেএম নজরুল ইসলাম ॥

ফরিদগঞ্জে মো. হুমায়ুন কবির (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাধা দেন পাওনাদারেরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা লাশের কফিন অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় পাওনা আদায়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর লাশ দাফনে অনুমতি দেন পাওনাদারেরা।

উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী এলাকায় বুধবার (২১ মে) এ ঘটনা ঘটে। ৩ সন্তানের জনক মো. হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের আবুল হোসেন শেখ ও রহিমেন্নেছা দম্পতির ছেলে। এর আগে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে মারা যান তিনি।

সরেজমিনে গেলে মৃতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় শাহী বাজার এলাকায় বহুমুখী ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। সেসব ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২৫ থেকে ৩০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। গত ৭ বছর পূর্বে আমার মেয়ে আসমা আক্তার মিলি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয় আমাদের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং আমাদের মেয়ের চিকিৎসা খরচর জন্য বিভিন্ন আত্মীয় ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করেন আমার স্বামী। পরবর্তীতে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। আমার স্বামী অনেক গ্রাহক থেকে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পেলেও তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে কেউ টাকা দিচ্ছিল না। এদিকে আমার স্বামীর থেকে পাওনাদারেরা এবং এনজিওকর্মীরা টাকার জন চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে আমার স্বামী গত ৪ বছর পূর্বে দুবাই চলে যেতে বাধ্য হয়। সেখানেও ভালো কিছু করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়েকমাস পূর্বে দেশে চলে আসলে আমরা ঢাকাতে বসবাস করতে শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, সোমবার (১৯ মে) বিকেলে আমার স্বামী হার্টস্ট্রোক করলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। পরেরদিন মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ আমার স্বামী মারা যায়। রাতেই স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে পাওনাদারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। আমার স্বামী কোটি টাকার মতো দেনা থাকলেও তার গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনি ৩ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় আমাদের টাকাগুলো উত্তোলন করতে পারলে আমার স্বামীর দেনাগুলো আমরা পরিশোধ করতে পারব ও শিশু সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব। অন্যথায় মরণ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।

পাওনাদার মো. রুবেল, বাদশা মিয়া, জসিমসহ আরো অনেকেই বলেন, মৃত হুমায়ুন কবির আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর দেয়নি। গত ৫ বছরের মতো সে পালিয়ে বেড়িয়েছে। তাই আজকে তার মরদেহ দাফনে আমরা বাধা দিচ্ছি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাওনাদারদের আপত্তির মুখে মো. হুমায়ুন কবিরের মরদেহ দাফনে বিলম্ব হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরে তার স্ত্রী টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মরদেহ দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Loading

শেয়ার করুন: