ঘূর্ণিঝড় মোখার মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় চাঁদপুর

 

মেঘনাবার্তা রিপোর্ট ॥

ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষতি মোকাবেলায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরে ৮নং মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ।

এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে নিরাপত্তার স্বার্থে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ফেনী এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।শনিবার (১৩ মে) দুপুরে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ সকাল ১০টা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কুমিল্লা, ফেনী ও চাঁদপুর জেলায় সকল ধরনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

এর আগে চাঁদপুর জেলা সদরের লঞ্চঘাট থেকে শুক্রবার ১২ মে রাত সোয়া ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা-চাঁদপুর, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা চাঁদপুর ভায়া শরীয়তপুর, মজু চৌধুরীর হাট (লক্ষ্মীপুর)-ইলিশা ঘাট (ভোলা) নৌপথের সবধরনের লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

এ ব্যাপারে জেলার মতলব,হাইমচর ও চাঁদপুর সদরসহ এই চারটি উপকূলীয় উপজেলায় ইউএনওদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে উপকূলীয় নদীতে নৌকা, ট্রলার প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার কূলে ফিরে আসছে। মাঠের আধাপাকা ধান কেটে ফেলছে কৃষক।

এছাড়া মাইকিং করে মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলবাসীকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ গুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুর্যোগপূর্ন সময়ে নদী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সাথে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এসব তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান। তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের তথ্য গনমাধ্যমকে প্রেরণ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা কার্যালয় সমূহে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলো হচ্ছে-০১৭০০৭১৬৭০১, টেলিফোন নম্বর: ০২৩৩৪৪৮৭৫৯৬ অথবা ০২৩৩৪৪৮৭৪৭২, ই-মেইল : ফৎৎড়পযধহফঢ়ঁৎ১২৩@মসধরষ.পড়স

কৃষি বিভাগকে বতর্মান মৌসুমে উৎপাদিত ফসল কাটা, স্বাস্থ্য বিভাগকে জরুরি মেডিকেল টিম গঠন এবং ওষধ মওজুদ রাখা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারকে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার কাজে প্রস্তুত থাকা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট, জেলা স্কাউট, জেলা রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ এনজিও প্রতিষ্ঠান সমূহকে দল প্রস্তুত রাখা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে মাইকিং করে সতকর্তামূলক প্রচারণার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও মওজুদ রাখা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে নগদ ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা, চাল ৫০৫.০০০ মেট্টিক টন, ডেউটিন ও গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরী ১০ বান্ডিল, শুকনো খাবার ১৯০ প্যাকেট এবং শীতবস্ত্র (কম্বল) ৩৮৪০ পিস।
চাঁদপুর জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ শাখার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা সদরে ২৯টি, ফরিদগঞ্জে ৩১টি, হাইমচরে ২৪টি, হাজীগঞ্জে ৪৪টি, কচুয়ায় ৫১টি, মতলব উত্তরে ৬২টি, মতলব দক্ষিণে ৮৮টি, শাহরাস্তিতে ২৪টি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ১লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭জন থাকার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

এদিকে, চাঁদপুর পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত রেখেছে চাঁদপুর কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ । একই সাথে শহর ও আশপাশে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সম্পর্কে সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ের সতর্কতা বিষয়ে আমাদের নৌ অঞ্চলে মাইকিং করে প্রচারনা চলছে। চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার যেসব থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি এবং করব। বিশেষ করে লঞ্চঘাট ও ছোট নৌযানগুলো নিরাপদে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Loading

শেয়ার করুন: