বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি : দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে ১৭ জানুয়ারী

মেঘনাবার্তা ডেস্ক

তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি তুরাগতীরে শুরু হওয়া ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্ব শেষ হয়।

রোববার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। তারা সর্ব শক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা ও রহমত প্রত্যাশা করেন।

মোনাজাত পরিচালনা করছেন কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব ও তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।

আজ ইজতেমা ময়দানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। ভেতরে ঠাঁই না পেয়ে তাদের অবস্থান নিতে হয়েছে বিভিন্ন সড়ক ও আশপাশের এলাকার মাঠে। কয়েক লাখ মুসল্লির সমাগমে শিল্পনগরী টঙ্গী পরিণত হয়েছে ধর্মীয় নগরীতে।

এর আগে গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বয়ান-মোজাকেরা, তালিম-তাশকিল, নামাজ-রোনাজারি ও তাসবিহ-তাহলিলে কেটেছে। এবার কনকনে শীতের মধ্যেই ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন মুসল্লিরা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ স্রোতের মতো ছুটে আসেন ইজতেমা ময়দানে। সকালে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১১টা ৮ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তারা। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা।

৩৮ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জোবায়ের আহমেদ প্রথম ১৮ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ২০ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সস্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণীবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ। চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

রোববার সকালে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।

ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত মারা যান আরও পাঁচ মুসল্লি। এ নিয়ে ময়দানে ৯ মুসল্লি ইন্তেকাল করলেন।

ইজতেমার রেওয়াজ অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় যৌতুকবিহীন বিয়ে। মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর শনিবার আবারও এ ঐতিহ্যে ফিরল ইজতেমা।

এদিন বয়ানমঞ্চে ১০০ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিয়ে পড়ান মাওলানা জোহায়েরুল হাসান।

Loading

শেয়ার করুন: