দেশের শ্রেষ্ঠ করদাতা ও প্রবীন ব্যবসায়ী হাজী কাউছ মিয়ার জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের শীর্ষ করদাতা চাঁদপুরের কৃতী সন্তান প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজী মোঃ কাউছ মিয়ার ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ।

চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বরে জন্ম নেয়া হাজী মোঃ কাউছ মিয়া সবার মুখে মুখে দানবীর এবং দেশ সেরা করদাতা হিসেবেই পরিচিত। ১৯৮৮ ও ৯৮-এর ভয়াবহ বন্যাসহ দেশের সকল দুর্যোগে এবং সবশেষ ২০২০-এর করোনাকালীন সময়ে মানুষের মাঝে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিলিয়ে দিয়ে তিনি দানবীরের সুনাম ধরে রাখেন। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না থেকে এককভাবে তিনি তাঁর ২৪ বছর বয়স থেকে ব্যবসা ও মানবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যবসায়ী বিভাগে শীর্ষ স্বতন্ত্র করদাতার স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন এই দানবীর।

রাজস্ব প্রদানে অসামান্য অবদানের জন্যে ধারাবাহিকভাবে স্বাধীনতার আগে এবং পরে এ যাবত ২৩ বার সিআইপি মর্যাদার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। দেশের শীর্ষ করদাতার স্বীকৃতি অর্জনের অনন্য রেকর্ড এখন তাঁর।

২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র তাঁকেই মুজিববর্ষের সেরা করদাতা সম্মাননা দেয় সরকার। কর প্রদানে সততা আন্তরিকতা ও দীর্ঘ বছর যাবৎ আয়কর দেয়ায় তাঁকে এ বিরল সম্মানে ভূষিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

২০১৬-১৭ কর বছরে তাঁকে ঢাকা জেলার ‘কর বাহাদুর পরিবার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। পাকিস্তান আমলেও ১৯৬৭ সালে সর্বোচ্চ করদাতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৫০ সালে তিনি প্রথম ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৯৫৮ সাল থেকে অদ্যবদি কর দিয়ে আসছেন।
এত্ত বয়সেও তিনি দৈনিক ৬/৭ ঘন্টা তার ব্যবসায়ী কাজে সময় দেন। তিনি হাকিমপুরী জর্দার একক মালিক।

এছাড়াও তার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।

ব্যবসায়ী জগতে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যার কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। উল্টো ব্যাংকগুলো তাঁর টাকা খাটায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৯৩ বছর বয়স পার করে ২৬ আগস্ট,২০২৩ খ্রিঃ তারিখে ৯৪ বছরে পা রাখছেন দেশের প্রবীণ এই ব্যবসায়ী।

হাজী মোঃ কাউছ মিয়া ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট চাঁদপুর সদরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে মরহুম হাজী আব্বাস আলী মিয়া ও মরহুমা হাজী মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন। তাঁর মমতাময়ী মা ছিলেন জমিদার কন্যা। সাত জমিদারের নাতি ছিলেন তিনি। হাজী বাড়ি নামে পরিচিত তাঁদের বাড়ি।

আরও জানা যায়, কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে আর পড়াশোনা এগোয়নি। পুরাণবাজার মধু বাবুর স্কুলে পড়েছেন তিনি। তাঁর বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা করেন। পড়ালেখা চালিয়ে যাবার জন্য বলতেন। কিন্তু কাউছ মিয়ার মন পড়ে থাকত ব্যবসার দিকে।

১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরাণবাজারে স্টেশনারী ব্যবসা শুরু করেন তিনি। মায়ের দেয়া কিছু টাকাই ছিল তার ব্যবসা করার প্রথম মূলধন। ওই সময় দেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী এলাকা পুরাণবাজারে তৎকালীন সময়ে তাঁর ৬টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো। ওই সময় ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিল তাঁর। ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকসহ অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় অর্ধশত আইটেমের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বয়সের কারণে অনেক ব্যবসা এখন ছেড়েও দিয়েছেন। নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্যে মোঃ কাউছ মিয়ার বেশ কিছু কার্গো জাহাজ রয়েছে। সেগুলো ছেলেদের নামে নামে দিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাই এখন জাহাজগুলো পরিচালনা করছেন।

সূত্র মতে, কাউছ মিয়া তাঁর মরহুম পিতা-মাতার নামে চাঁদপুর-শরিয়তপুর সীমানা ঘেঁষা উত্তর তারাবুনিয়ায় আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে (কবি নজরুল সড়কে) মায়ের নামে ফাতেমা খাতুন মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা আবাসিক এলাকায় মদিনা জামে মসজিদ এবং স্ট্র্যান্ড রোডে আল-আমিন স্কুলের পাশে বোগদাদীয়া জামে মসজিদ করে দিয়েছেন। এ দুটি মসজিদের মোতওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, কাউছ মিয়া ১৯৮৮ সালে হাকিমপুরী জর্দা তৈরি এবং বাজারজাত শুরু করেন। এটি ছিলো তখন কুটির শিল্প।

ঐ সময়ে তার প্রতিষ্ঠানে ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করতো। সরকার ১৯৯৯ সালের জুন মাসে জর্দার উপর ভ্যাট আরোপ করে। তখন বছরে ট্যাক্স প্রদান করতেন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

বর্তমানে সম্পূরক শুল্কসহ ব্যবসায় তিনি ট্যাক্স প্রদান করছেন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।জর্দা ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকাতে বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।

বয়সের কারনে অনেক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ায় এখন কৃষি ও ডেইরি খামারের ওপর বেশি মনোযোগ তাঁর।
চাঁদপুরে মেঘনা নদী বেষ্টিত তার রয়েছে মাইলকে মাইল কৃষি জমি।সেখানে তিনি প্রজেক্ট করে ধান,সরিষা,মরিচ, সয়াবিনসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের আবাদ করাচ্ছেন। পাশাপাশি সেই কৃষি জমির ওপর গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।প্রায় চার শতাধিক গবাদিপশু রয়েছে তার গরুর প্রজেক্টে।ইনকামট্যাক্স ফাইলে তা দেখানো আছে।

বয়স যাই হোক মনের দিক থেকে কাউছ মিয়া এখনো প্রাণবন্ত।

তিনি মনে করেন, মানুষ যদি শারীরিকভাবে এবং মনের দিক থেকে সুস্থ থাকে সেটি আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহর নেয়ামত ছাড়া কেউ সুস্থ থাকতে পারে না। এ জন্যে রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।

মানবসেবার মধ্য দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন কাউছ মিয়া।

Loading

শেয়ার করুন: